প্রবীর মণ্ডল এখন গ্রামে বসেই অনলাইন ব্লগিং থেকে মাসে গড় ৫ লাখ টাকা উপার্জন করছেন!!!

উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের এক ছোট, গরিব গ্রামে জন্ম হয়েছিল প্রবীর মণ্ডলের। জন্ম থেকেই তার জীবন সহজ ছিল না। পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতটাই দুর্বল ছিল যে প্রতিদিনের খাবার, জামা কাপড় আর ওষুধের জন্য লড়াই করতে হতো। বাবা দিনমজুরি করতেন, আর মা সংসারের সব কাজ সামলাতেন। চার ভাইবোনের মধ্যে প্রবীর ছিল সবচেয়ে বড়, তাই পরিবারের দায়িত্ব তার কাঁধেই এসে পড়েছিল।

ছোটবেলা থেকেই প্রবীর বুঝে গিয়েছিল যে জীবনে কিছু করতে হলে পরিশ্রম আর ধৈর্য খুব দরকার। মাটির কাজ, চাষবাস, মাঠের কাজ—এসবই ছিল তার নিত্যদিনের সঙ্গী।

প্রবীর পড়াশোনায় ভালো ছিল, কিন্তু গ্রামে সীমিত সুযোগ-সুবিধার কারণে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সহজ ছিল না। বইয়ের অভাব, কম আলোয় পড়াশোনা, রাতের অন্ধকার—সব যেন তাকে থামিয়ে দিতে চাইত। তবু সে হাল ছাড়েনি। প্রতিদিন রাত জেগে পড়াশোনা করত আর স্বপ্ন দেখত যে একদিন তার পরিবার দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাবে। ছোট ভাইবোনদের খাওয়া-দাওয়া, জামাকাপড় আর ওষুধের চিন্তা সবসময় তার মনে থাকত।

বড় হয়ে প্রবীর সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। দিন-রাত পরিশ্রম করে পরীক্ষা দিল। প্রথমবার ব্যর্থ হলো, মন ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু হাল ছাড়ল না। দ্বিতীয়বারও ব্যর্থ হলো। তৃতীয়বার মনে হলো ভাগ্য বুঝি সঙ্গে নেই। সরকারি চাকরির স্বপ্ন ভেঙে গেল। হতাশা তাকে গ্রাস করতে চাইছিল, কিন্তু প্রবীর হাল ছাড়ল না। সে ঠিক করল, যেভাবেই হোক পরিবারের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা আনবে।

সরকারি চাকরিতে ব্যর্থ হওয়ার পর প্রবীর নতুন পথ খুঁজতে শুরু করল। ভাইবোনদের পড়াশোনা, প্রতিদিনের খাবার, জামাকাপড়, ওষুধ—সবকিছুর দায়িত্ব তার মাথায় ছিল। প্রতিদিনের লড়াই, ক্ষুধা, ক্লান্তি আর দারিদ্র্য যেন তাকে ঘিরে ধরেছিল। অনেক সময় মনে হতো, জীবন কি কোনোদিন সহজ হবে? তবুও সে নিজেকে বলত—“আমি লিখব, শিখব, হার মানব না।”

একদিন ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে প্রবীরের চোখে পড়ল অনলাইন ব্লগিং আর অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে লেখা। প্রথমে বিশ্বাস হয়নি, কিন্তু চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিল। হাতে খুব অল্প টাকা ছিল, তাই সে নেমচিপ থেকে ডোমেইন ও হোস্টিং কিনল

  • নেমচিপ প্রায়ই কুপন কোড বা ডিসকাউন্ট অফার দিয়ে থাকে। সেগুলো ব্যবহার করে খুবই কম খরচে ডোমেইন ও হোস্টিং কেনা যায়।

  • ডোমেইন কিনতে চাইলে নেমচিপ এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হবে। অন্যত্র থেকে কেনা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

ছোট বিনিয়োগের জন্য এটা একদম ঠিক ছিল, এবং প্রবীর ব্লগিং শুরু করল।

প্রবীর তার ব্লগে টেকনোলজি টিপস, শিক্ষামূলক লেখা আর অনলাইন মার্কেটিং সম্পর্কিত পোস্ট দিতে শুরু করল। প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত লিখত। ক্ষুধা, ক্লান্তি, দারিদ্র্য—সব তার সঙ্গী ছিল। প্রথম মাসে খুব কম পাঠক আসত। হতাশা তাকে বারবার আঘাত করত। তবুও হাল ছাড়ল না। SEO শিখল, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট শেয়ার করল, আর পাঠকদের ধরে রাখার কৌশল ব্যবহার করল। ধীরে ধীরে নিয়মিত পাঠক আসতে শুরু করল। ছোট ছোট সাফল্য তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিল।

প্রবীর বুঝল, শুধু ট্র্যাফিক পেলেই হবে না, আয় করাও জরুরি। তাই সে তিনটা প্রধান উপায় নিল—

1️⃣ প্রথমে অ্যামাজন অ্যাসোসিয়েট/অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম শুরু করল। ল্যাপটপ, হেডফোন, কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স—প্রতিটি প্রোডাক্ট নিয়ে রিসার্চ করত, ফিচার বুঝত আর বিশ্বাসযোগ্য রিভিউ লিখত। পাঠকরা সেই রিভিউ পড়ে কিনত, আর তার থেকে কমিশন আসত। প্রথমে আয় কম ছিল, কয়েকশো টাকা। কিন্তু ট্র্যাফিক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমিশনও বাড়তে লাগল।

2️⃣ তারপর Google AdSense যোগ করল। প্রতিটি ভিজিট আর বিজ্ঞাপন ক্লিক থেকে আয় হতে শুরু হলো। প্রথমে কয়েকশো টাকা, কিন্তু পাঁচ মাসে তা অনেক বেড়ে গেল। সে এমনভাবে কন্টেন্ট সাজাল যাতে বিজ্ঞাপন পাঠকদের বিরক্ত না করে, বরং স্বাভাবিকভাবে আয় বাড়ায়।

3️⃣ এরপর ছোট কোম্পানিগুলির থেকে শুরু করে বড় কোম্পানির কাছ থেকেও স্পনসরশিপ নিতে শুরু করল। প্রথমবার ৫,০০০ টাকা পেল। যদিও পরিমাণ কম ছিল, কিন্তু এতে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল। ধীরে ধীরে শিখল কীভাবে বড় কোম্পানির সঙ্গে প্রফেশনালি যোগাযোগ করতে হয়, ইমেল লিখতে হয় আর মানসম্পন্ন কন্টেন্ট উপস্থাপন করতে হয়।

মাত্র পাঁচ মাসের কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য আর রাত জাগার ফল পেল সে। প্রবীরের আয় পাঁচ মাসে পৌঁছে গেল ₹৫,০০,০০০ টাকায়। আয়ের হিসেব ছিল এভাবে—Amazon.in অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে ₹২,০০,০০০ – ₹৩,০০,০০০, Google AdSense থেকে ₹১,০০,০০০ – ₹১,৫০,০০০, আর স্পনসরশিপ ও পোস্ট থেকে ₹৫০,০০০ – ₹৮০,০০০।

এই টাকাগুলো শুধু সংখ্যা ছিল না, এগুলো তার পরিবারের জীবনের নতুন সূচনা। ছোট ভাইবোনদের পড়াশোনা, প্রতিদিনের খাবার, জামাকাপড়, ওষুধ—সব দুশ্চিন্তা শেষ হয়ে গেল। প্রবীর তার পরিবারকে আর্থিক নিরাপত্তা দিল।

এখন প্রবীরের চোখে শুধু টাকা নেই, আছে আশা, আত্মবিশ্বাস আর নতুন স্বাধীনতা। যে ছেলে একদিন দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করত, আজ তার লেখনী, পরিশ্রম আর ধৈর্যের জন্য পুরো পরিবার নতুন জীবন পাচ্ছে। প্রতিটি ব্লগ পোস্ট, প্রতিটি রাত জাগা, প্রতিটি ভুল আর শেখার প্রতিটি মুহূর্ত—সব তাকে সাফল্য আর আত্মনির্ভরতার পথে নিয়ে গেছে।

👉 এই গল্পটা সেই বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করুন, যে এই মুহূর্তে আর্থিক সমস্যায় ভুগছে। বলা যায় না, হয়তো এই ছোট্ট গল্পটাই তার ভাগ্য বা পরিস্থিতি পাল্টে দিতে পারে।

Comments